ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, হোসনে মোবারকঃ ১১ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হন। এসময় তাদের কণ্ঠস্বরে উচ্চারিত হয়, ‘ধর্মব্যবসার ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না’,’উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এক সাথে’, আমরা সবাই ভাই ভাই, ভেদাভেদ ভুলে যাই’, এসব শ্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সমাবেশস্থলে দলে দলে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করে তারা। গতকাল গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তন প্রাঙ্গণে হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
সমাবেশ উপলক্ষে পুরো এলাকা সাজ সাজ রব উঠে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর পদচারণায় পুরো এলাকায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে।
হেযবুত তওহীদ ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ও এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিভাগের সভাপতি ডাঃ মাহবুব আলম মাহফুজ।
সকাল নয়টায় পবিত্র কোর’আন থেকে তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। শুরুতেই হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতিগণ একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।এসময় তাদের বক্তব্যে দলটির সুদীর্ঘ পথচলার বিপ্লবী ঘটনাপ্রবাহ, ধর্মব্যবসায়ী কর্তৃক মিথ্যা অপপ্রচারের নিন্দা, অনলাইন অফলাইনে হেযবুত তওহীদের এমাম ও সদস্যদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদএবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর উঠে আসে। সভাপতির বক্তব্যে বিগত বছরে হেযবুত তওহীদের নিবেদিত প্রাণ বেশ্ কয়েকজন সদস্যদের অকাল মৃত্যুতে শোক পেশ করা হয়। সম্মেলনে গত বছর পাবনায় উগ্রবাদীদের হামলায় নিয়ত শহীদ সুজনের ভাই মো. ইয়াকুব মন্ডল তাঁর স্মৃতি চারণ করেন। এসময় পুরো সমাবেশস্থলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বেলা এগারোটায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের পূর্বে ঢাকা বিভাগের পক্ষ থেকে সভাপতির নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদের এমামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় মুহুর্মুহু করতালি ও শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় অনুষ্ঠানস্থল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম প্রায় ৩০ টি বিষয়ের উপর দীর্ঘ দুই ঘন্টা বক্তব্য দেন। এসময় নেতাকর্মীদের আগামী দিনগুলো দল পরিচালনায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “একাত্তরের লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে আজকে গভীর চক্রান্ত চলছে। পশ্চিমাদের অনুকরণে তৈরি হওয়া পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক সেক্যুলার আদর্শ নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিযেছে। এদিকে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে আশ্রায় করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন দল উপদল নিজেদের মধ্যে হানাহানি রক্তারক্তিতে লিপ্ত।কয়েকদিন পর পর একেকটা ইস্যু সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। সেই সব ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হামলা, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি ঘটনা ঘটছে। এমনই একটি পরিস্থিতিতে সত্যের মশাল নিয়ে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে কোনো এক মসজিদে জুমাহর নামাজ শেষে হাজার হাজার মুসল্লি একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট কোনো ফেরকা বা ত্বরিকার মানুষের উপর হামলা করছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এধরনের ঘটনার ফলে সাধারণ মানুষ হতাহত হচ্ছে, রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঘটনা একদিনে হয় নি। বরং একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিত ভাবে একটি হ্যান্ডবিল রচনা করে, অপপ্রচার মূলক বক্তব্য দিয়ে, কথা টুইস্ট করে, কোর’আন হাদিসের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কানি দিতে থাকে। এসব করে তারা একটি প্রেক্ষাপট রচনা করে।নির্দিষ্ট দিন তারিখ ঠিক করে কারা হামলা করবে। কবে হামলা করবে, সব ঠিকঠাক করে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনা কী ঘটবে তারা তা আগে থেকেই জানে এবং তারা সেভাবেই বিবৃতি দিতে থাকে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো রাষ্ট্রের জন্য এধরনের লক্ষণ ভালো নয়। কোনো রাষ্ট্রে এধরনের কার্যক্রম চললে সেই রাষ্ট্র বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হতে পারে না। এবং ধীরে ধীরে সে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে না, সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রধান অতিথি বক্তব্যের পর এমামের নেতৃত্বে সমাবেশ থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি সম্মেলনস্থল থেকে বের হয়ে গুলিস্তান গোলচত্বর হয়ে বঙ্গভবনের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সম্মেলনস্থলে এসে শেষ হয়। এসময় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. মশিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি মো নিজাম উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি আল আমীন সবুজ, খুলনা (অঞ্চল -১) বিভাগের সভাপতি মোতালিব খান, খুলনা (অঞ্চল -২) বিভাগের সভাপতি শামসুজ্জামান মিলন, সিলেট বিভাগের সভাপতি মো. আলী হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী, ঢাকা বিভাগীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা ইসলাম, ঢাকা মহানগর প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীগণ