বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনা সদর উপজেলার সদর বরগুনা ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের কয়েকটি বাড়ীর বসতঃঘর এবং রান্নাঘরে,গাছে হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠছে আগুন। কিন্তু কেউ জানেন না কী করে ধরছে আগুন। একের পর এক এলাকার বিভিন্ন ববসতঃঘরে আগুন লেগেই চলেছে। কখনো রাতে, কখনো সকালে, আবার কখনো বিকেলে। হঠাৎ অলৌকিক এবং রহস্যজনক এমন আগুনে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আগুনের আতঙ্কে কাজ ফেলে দিনে রাতে বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন পুরুষরা। ঘরের বাইরে রান্না করছেন গৃহিণীরা। অনেকেই সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে। হঠাৎ করে লাগা এমন অলৌকিক আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ইতোমধ্যে ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হচ্ছে প্রতিদিন। আজ সরেজমিনে এই প্রতিবেদক এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উপস্হিতিতেও আগুন লাগার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
রিয়াজ নামের এক যুবক জানায়, অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ রাতে এশার নামাজ পড়তে যাবার সময় আঃ রহিমের ঘর থেকে তারা আগুন আগুন চিৎকার শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভান। এ পর্যন্ত ৫বার এই ঘরে এভাবে আগুন লেগেছে। পরের দিন আবারও গ্রামের ৮টি ঘরে অলৌকিকভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে একমাস যাবৎ প্রতিদিনই ওই গ্রামে লাগাতার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। তবে কীভাবে এই আগুন লাগছে তা কেউই বলতে পারছেন না।

ভুক্তভোগী রিপন, সেন্টু, মনসুর আলীসহ এলাকাবাসী বলেন, প্রায় একমাস ধরে বাড়ির যে কোন জায়গায় হঠাৎ করে আগুন লেগে যাচ্ছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ বারের মতো আগুন লাগে। কিন্তু কীভাবে এ আগুন ধরেছে বলতে পারি না। আগুনের ভয়ে পরিবারের স্বজনদের বাসায় একা রেখে কোথাও যেতেও ভয় লাগছে। যদিও প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কেউ আগুন দিচ্ছে। তাই পাহাড়া বসাই এলাকাবাসী। পরে দেখি কেউ আগুন দিচ্ছে না, এমনি এমনিতেই আগুন লাগছে। আগুনে কখনো কাপড় পুড়ছে, কখনোবা ঘরের জিনিসপত্র। আগুন নেভাতে গিয়ে অনেকেই হাত পা পুড়িয়ে ফেলছে, এনিয়ে এখন আমরা অনেক আতঙ্কে আছি।
ভুক্তভোগী আলেয়া, রেহেনা, নাসিমা সহ এলাকার গৃহিণীরা বলেন, প্রতিদিন আগুন লাগায় বাড়িতে থাকাই আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ হাত পা পুড়িয়ে ফেলছে। না জানি কখন কার বড় কোন ক্ষতি হয়ে যায়। পুড়তে পুড়তে অনেকের পড়ার মতো কাপড় ও নাই। রাতে ঘুমাতে পারছিনা। বাচ্চা
স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, অনেক ক্ষেত্রে এমন বিষয়কে স্থানীয়রা ভৌতিক দাবী করলেও এর সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে গ্রামে এমনটা হতে পারে। আবার ইথেন, প্রোপেন বা বিউটেন গ্যাসও হতে পারে। পরিক্ষা নিরিক্ষায় এর সত্যতা পাওয়া যেতে পারে।
ইতোমধ্যে এলাকাটি পরিদর্শন করছেন বরগুনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার বদিউজ্জামান বলেন, হঠাৎ করে এমন আগুন লাগা নতুন নয়। দেশের অনেক স্থানেই প্রায়ই এমন ঘটনা শোনা যায়। স্থানীয়রা এটাকে ভৌতিক বলে মনে করে। ভৌতিক ব্যাপার হতেও পারে। যাই হোক অলৌকিক এমন ঘটনায় যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য আমরা সজাগ আছি।
এদিকে বিষয়টি অলৌকিক না অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অনেক ক্ষেত্রে মিথেন গ্যাসের প্রভাবেও এটা হতে পারে। উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে ঘটনা স্থান পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে।